Feeds:
Posts
Comments

Archive for June, 2012

কবীর চৌধুরী অনূদিত জিএম কুয়েটজির উপন্যাস বর্বরদের জন্য অপেক্ষা

 

‌আলোচনা-গাজী সাইফুল ইসলাম

জিএম কুয়েটজি বুকার এবং নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ২০০৩ বিজয়ী ঔপন্যাসিক। মি. কুয়েটজি দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভব ব্রিটিশ নাগরিক, পূর্বসুরি নাদিন গর্ডিমার থেকে ১২ বছর পর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন। উল্লেখ্য যে, বর্ণবাদের ঘোর সমালোচক নাদিন গর্ডিমার ১৯৯১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কুয়েটজি নিজেও বর্ণবাদের ঘোর বিরোধী কিন্ত বিরোধীতার ধরনে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। নাদিন গর্ডিমারে বর্ণবাদের প্রসঙ্গ কিছুটা সরাসরি কিন্তু কুয়েটজিতে তা প্রচ্ছন্ন। পশ্চাৎপদ মানুষদের পক্ষাবলম্বন ও চরিত্র চিত্রণের মাধ্যমে ঘৃণা ও বিদ্বেষের চিরকালীন চিত্র এঁকেছেন তিনি। বিশেষ করে, নগর সভ্যতার ধ্বজ্জাধারী মানুষেরা যে পেছনে পড়া সমাজের মানুষদের প্রতি চরম বৈষম্য প্রদর্শন করে তার চিত্র কুয়েটজির রচনায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। 

Image

 নাদিন গর্ডিমারের পরে দক্ষিণ আফ্রিকান উপন্যাসের জন্য নোবেল পুরস্কার কমিটির এ স্বীকৃতি অত্যন্ত তাৎপযপূর্ণ। কারণ বিশ-শতাব্দির শেষের দিকে চিন্তা ও বিনোদনের সমন্বয়ে তৈরিকৃত কিছু দর্শক নন্দিত সিনেমার মাধ্যমে মানুষের পাঠাভ্যাস বদলে যাবার যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখকদের উপন্যাসগুলো আমাদের সে আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছে। শুধু সাহায্যই করেনি প্রমাণ করেছে যে, এ আশঙ্কা অমূলক এবং কিছুটা অর্থহীনও। এজন্য নির্দ্বিধায় বলা যায়, বিশ্ব নন্দিত উপন্যাসগুলো বিশ্বনন্দিত সিনেমার চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। ভবিষ্যতেও উপন্যাসের সম্ভাবনা এমনই উজ্জ্বল। কারণ, উপন্যাস ছাড়া জীবন বাস্তবতার পূঙ্খানুপুঙ্খ ডিটেলসের আর কোনো মাধ্যম মানুষের আয়ত্বে এখনো আসেনি।

গত কয়েক শতাব্দি সাহিত্য ও দর্শনে যে ধরনের চিন্তাশক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, বিজ্ঞান ছাড়া ওসব শাখায় এমন চিন্তার আবির্ভাব বর্তমানে ঘটছে না। তবু নিরাশ না হলেও চলে এ জন্য যে, উপন্যাস রচিত হচ্ছে। এ জন্যই নরম্যান মেইলারের এ বক্তব্যের সঙ্গেও এক মত হওয়া যায় না যে, এ শতাব্দির সেরা প্রতিভাগুলো সিনেমা তৈরিতে আত্ম নিয়োগ করেছে। বরং বলা যায় সমান্তরালভাবে সাহিত্যিকেরাও এগিয়ে যাচ্ছেন তাদের নতুন নতুন চিন্তা ও উদ্ভবন নিয়ে। জিএম কুয়েটজি, ওরহান পামুক, ইসাবেল আলেন্দে, সামলান রুশদি, অরুন্ধুতি রায়, অমিতাভ ঘোষ, ইয়ান ম্যাকওয়ান, মনিকা আলি, মার্গারেট অ্যাটউড, জুম্পা লাহিরি, কিরণ দেশাই, জেডি স্মিথ এমনি আরও অসংখ্য প্রতিভা আমাদের চিন্তার জগতকে আলোকতি ও আলোড়িত করে এগিয়ে চলছেন। তাই বলতে হয়, নোবেল কমিটি প্রতি বছর আমাদের সামনে শুধু একজন কবি বা লেখককেই উপস্থাপন করে না, আর সেই সুবাধে ওই কবি বা লেখক দিনে দিনে শুধু স্টারেই পরিণত হন না, জগৎকেও সত্যিকার অর্থে এগিয়ে নিয়ে যান নিজেদের চিন্তার উৎকর্ষ দ্বারা। নোবেল কমিটি যদি একেবারেই রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে লেখক বাছাই করেন তাহলে তো কথাই থাকে না। কারণ তাদের মাধ্যমে জগৎ সত্যিকার মেধার সঙ্গে পরিচিত হয়, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চিন্তারও সন্ধান পায়। এর প্রমাণ অনেক, ১৯৫৬ সালে নোবেল কমিটি আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে তাঁর ওল্ড ম্যান এন্ড দি সী উপন্যাসের জন্য পুরস্কার দিয়ে সত্যিকার প্রতিভাকেই বাছাই করেছিল। বোধহয় এ কথা বলাও নাজায়েজ হবে না যে, একজন লেখক যেমন একটি মহৎ বই রচনা করে তাঁর গুরুদায়িত্ব পালন করেন, তেমনি সেই বইটি বিশ্বব্যাপী পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করে একই রকম গুরু দায়িত্ব পালন করে নোবেল কমিটি। এসব কথা এ জন্য বলা হলো যে, নোবেল কমিটি জিএম কুয়েটজিকে পুরস্কার দিয়ে একটি যথার্থ প্রতিভাকেই সম্মানীত করেছিল। এখানে বলা আবশ্যক যে, মি. কুয়েটজি তাঁর দি লাইফ এন্ড টাইমস অব মাইকেল কে উপন্যাসের জন্য ১৯৮৩ সালে এবং ডিসগ্রেস উপন্যাসের জন্য ১৯৯৯ বুকার পুরস্কার জিতেন।  আর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সমগ্র সাহিত্য কর্মের বিচারে।

যা হোক, ওয়েটিং ফর বার্বারিয়ান্স (১৯৮০) কুয়েটজির সেরা উপন্যাসগুলোর একটি। উপন্যাসটির নাম শুনেই পাঠকের মনে এ উপন্যাসের কাহিনীর একটা সাধারণ ছক তৈরি হয়ে যায়। ১৯৯৯ সাল থেকে এমন একটি ছক বুকে নিয়ে আমি ঘুরেছি মূল বইটি পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় কারণে। এবার শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরীর অনুবাদের সুবাধে বইটি পড়ার সুযোগ হলো, আর এটা বোঝা গেল যে, বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাগোড়াই আমার ধারণা ভুল ছিল। এর একটা কারণ হয়তো এই যে, আফ্রিকান উপন্যাসের অনেক সাধারণ বৈশিষ্ট্যই এতে অনুপস্থিত। 

বর্বরদের জন্য অপেক্ষা গল্পটির (গল্পটি ইতিহাস আশ্রিত হতে পারে আবার লেখকের কল্পনাও হতে পারে) পটভূমিতে যে অঞ্চলটির কথা আমরা পেয়েছি সেটি আসলে একটি বিচিত্র ভূখণ্ড। সেটি রাষ্ট্রের (বা সাম্রাজ্যের) এক প্রান্তে অবস্থিত। সেখানে যাযাবররা বাস করে। তারা আসলে মরুদ্যান ও প্রান্তরবাসী শান্তিপ্রিয় মানুষ। দুনিয়ার জটিলতার সঙ্গে তারা তেমন পরিচিত নয। তবে কোনো রাষ্ট্রিয় শাসনও তারা মানতে রাজি নয়। তারা তাদের মতো করে স্বাধীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত। শত অভাব, অনিশ্চিয়তা, ঝুঁকির মধ্যেও তারা তাদের বুনো জীবন থেকে সরে আসতে রাজি নয়। ফলে সব সময়ই তাদের অভাব লেগে থাকে। আর এ জন্য দলছুট হয়ে কেউ কেউ হয়তো বিভ্রান্তের পথে পা বাড়ায়। শহরের লোকদের জিনিসপত্তর চুরি করে। ছিনতাই করে। এসব করতে গিয়ে কখনো তারা রক্তপাতও ঘটায়। ফলে সভ্য সমাজে তাদের সম্পর্কে একটা ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের নোংরা-জংলি পোশাকের জন্য, তাদের আচরণের জন্য আখ্যায়িত হয় বর্বর হিসেবে। এমন ছিচ্‌কে চোর, ছিনতাই কারী, খুনী-ডাকাত সভ্য সমাজেও কমবেশি থাকে থাকে। কিন্তু যখন এর দায় নিচের দিকে চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে, তখন তারা তা নিচের দিকেই চাপিয়ে দেয়। সব সমাজেই এই অদ্ভুত রোগটা দেখা যায়। কিন্তু সভ্য সমাজেই বোধহয় এই প্রবণতাটা একটু বেশি, এবং প্রক্রিয়াটাও উন্নত।

উপন্যাসটির কেন্দীয় চরিত্র দক্ষিণ আফ্রিকার স্বৈরাচারি সমরবাদী সরকারের একজন বেসামরিক কর্মকর্তা। যিনি একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। কয়েক দশক ধরে তিনি রাজধানী থেকে দূরে ওই বিচিত্র প্রান্তিক এলাকাটিতে প্রশসানিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্রাজ্যবাদী সরকার যাদের যুগের পর যুগ ধরে বর্বর আখ্যায়িত করে আসছে, তার কাজ মূলত তাদের সঙ্গেই, তাদেরকে ট্যাকেল করা। তিনি তা করেও যাচ্ছেন দক্ষতা ও সততার সঙ্গে। তারপরও এটা সবারই জানা যে, সীমান্ত সমস্যার সহজ কোনো সমাধান হয় না। যুগ যুগ ধরে তা চলে।

বর্বরদের হামলার শিকার হয় শহরের বাসিন্দারা, গায়ের কৃষকরা। তবে তা খুব গুরুতর নয়, ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন সময় পেলে একদিন তা মিটমাট করে ফেলতে পারবেন। বর্বররা মূল সমাজের সঙ্গে একেবারে মিশে না গেলেও রাষ্ট্রের নিয়ম নীতি একদিন মেনে নেব। কিন্তু তিনি এ আশংকাও করেন যে, সরকার যেভাবে চায় (অর্থাৎ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে) সেভাবে এগোলে বর্বরদের সঙ্গে একটা যুদ্ধ অনিবার্য। এক সময় কেন্দ্রীয় সরকারের তৃতীয় ব্যুরোর একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যার নাম মি. জোল, সীমান্তে এসে হাজির হন ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য। তিনি তদন্ত করবেন, ধরা পড়া বর্বরদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করবেন। তিনিই এই উপন্যাসে ম্যাজিস্ট্রেটের বিপরীতে শক্তিশালী আরেকটি চরিত্র। তিনি অভিযান পরিচালনার নামে সাধারণ জেলে, পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসী, এদের নির্বিচারে ধরে আনেন। এসব বন্দির ওপর যে ভয়ানক নিপীগন ছালানো হবে, সে কথা ভেবে ম্যাজিস্ট্রেট আগেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তার তখন মনে হতে থাকে, বিশ্ব ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায় যদি এই মুহূর্তে শেষ করা যেত, এই কুৎসিত মানুষগুলোকে যদি এখনই পৃথিবীর বুক থেকে নিচিহ্ন করে দেয়া যেত। আসলে তার বক্তব্য হলো যারা যুগ যুগ ধরে মানবেতর জীবন যাপন করবে, সভ্য সমাজে নিজেদের কোনোদিন প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না, অধিকন্তু বিনা কারণেই অত্যাচারিত হবে, তাদের বেঁচে থেকে কী লাভ?

মি. জোল তাদের ওপর নানান প্রক্রিয়ায় অমানবিক অত্যাচার চালায়। হাতুড়ি দিয়ে মাথায় চরম আঘাত করে, কিংবা দুদিক থেকে দুজন ধরে অত্যন্ত জোরে বন্দির মাথা ঠুকে দেয় দেয়ালে। ফলে জোলের অত্যাচার থেকে সাধারণত কেউ বেঁচে যায় না, যদিও বাঁচে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না সারাজীবন। ম্যাজিস্ট্রেট এ হাড় জল করা অত্যাচার সহ্য পারতেন না। তিনি বরাবর ভেবে এসেছেন তদন্তের নামে এটা স্রেফ নির্মমতা, অত্যাচার। এর প্রতিরোধ হওয়া দরকার। কিন্তু কীভাবে তিনি তা বুঝে উঠতে পারেন না। শুধু হা-পিত্যেস করেন, ছটফট করেন। বর্বরদের ওপর যখন অত্যাচার চলে সহ্য করেতে না পেরে তিনি অন্যত্র সরে যান।

একবার একদল মানুষের সঙ্গে একটি যুবতী মেয়ে ও তার বৃদ্ধ পিতাকে ধরে আনেন কর্ণেল জোল। তার জেরার মুখে তার সহকর্মীদের অত্যাচারে মৃত্যু হয় বৃদ্ধের। তারা মেয়েটিরও পা দুটি গুঁড়িয়ে দেয়, জ্বলন্ত লোহার চাকতি তার চোখের সামনে ধরে রেখে তার চোখের জ্যোতি নষ্ট করে দেয়। আরও ভয়ানক নিপীড়ন চালায় তার নারী সত্তার ওপর।

পরবর্তী সময় কর্ণেল জোল কিছুদিনের জন্য ওখান থেকে চলে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট ভিক্ষারত পঙ্গু মেয়েটির দেখা পান। এবং তাকে তুলে এনে পরম মমতা ও ধৈর্য্যের সঙ্গে তার শুশ্রূষা করেন। এভাবে বন্দিনী মেয়েটির সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটের এমন একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে যার সহজ কোনো ব্যখ্যা হয় না। এমনকি মেয়েটির সব দায়িত্ব ম্যাজিস্ট্রেট তার নিজের কাঁধে তুলে নেয়ায় সে ওখানকার রান্না ঘরে কাজ করার সুযোগ পায়। আর রাতে ম্যাজিস্ট্রেটের শয্যসঙ্গী হয়। এভাবে তার সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট এত কিছু করা সত্ত্বেও মেয়েটির মনের নাগাল পায় না। তবু মেয়েটির প্রতি তার অনুরাগ কমে না। এর কারণ মানুষের প্রতি তার কোমল মনোভাব, যা তার স্বভাবজাত| এ জন্য মাঝে-মধ্যেই তার মনে হতো, আমার স্থান যদি মেয়েটির হতভাগা পিতার জায়গায় হতো-তাহলে কী হতো? আমি কি পারতাম তাকে রক্ষা করতে? পারতাম না। এ জন্যই তিনি অনেক ভেবে উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়েটিকে তার আপনজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। তিনি তিনজন সৈনিকসহ মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে সেই ঝুঁকিপর্ণ বর্বর অঞ্চলটিতে যান। সেখানে মেয়েটির মাধ্যমে বর্বরদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আলোচানা করেন। বিদায় বেলায় মেয়েটিকেসহ তাদের কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করেন। এরপর ফিরে আসেন তার কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু এসেই বন্দি হন বর্বরদের সঙ্গে মেলামেশা করার অপরাধে। অভিযোগ আনা হয়, শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলানোর। এটাকে একটা বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করে নবাগত পুলিশ অফিসার। তারা তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই কয়েদ করে।

পরে আবার কর্ণেল জোল দৃশ্যে ফিরে আসেন, ম্যাজিস্ট্রেটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য।

উপন্যাসটির ১৪৮ পৃষ্ঠা থেকে ১৬০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত কর্ণেল জোলের সহকর্মী ম্যন্ডেল ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর যে সব নিপীড়ন চালায়, তাতে ফ্রাঞ্জ কাফকার পেনাল কলোনির কথা মনে পড়ে, অত্যাচারে নিষ্ঠুরতার ধরনে রকমফেরের কারণে কাফকার তীব্রতা যদিও এতে অনুপস্থিত থাকে।

বলা আবশ্যক যে, জমকালো সব উপন্যাসই, যেগুলো পরবর্তী সময়ে বিশ্বের গল্পে পরিণত হয়েছে, সেগুলো কোনো না কোনো অঞ্চলের গল্প। কিন্তু আঞ্চলিক গল্পও লেখকের গভীর মনোনিবেশ, উদ্ভাবনী চিন্তা ও ভাষার কারুকাজের কারণে, কাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে মহৎ শিল্পকর্মে পরিণত হয়। ২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখক ওরহান পামুকের কথাও একই কারণে বিবেচনা যোগ্য। তাঁর উপন্যাস, যেমন মাই নেম রেড, স্নো, ইস্তাম্বুল ইত্যাদি সবই    ইস্তাম্বুলের পটভূমিতে রচিত। টমাস হার্ডির মেয়র অব ক্যাস্টারব্রীজ, গ্রেসিয়া দেলেদ্দা, ম্যাক্সিম গোর্কি আর পার্ল এস বাক মা নামের যেসব উপন্যাস লিখেছেন, সবগুলোই আঞ্চলিক গল্পের রূপদান মাত্র। কিন্তু রচনাশৈলীর উৎকর্ষের জন্য ওসব আজ বিশ্ব মানবের সম্পদে পরিণত হয়েছে। যে দেশে, যে পরিস্থিতিতেই এসব উপন্যাস পঠিত হোক, পাঠকের মনে হবে, এ গল্প আমার, আমার দেশের মানুষের, আমার দেশের বাস্তবতার।

 বইয়ের আলোচনা করতে গেলে বইয়ের লেখক সম্পর্কে কমই বলার সুযোগ থাকে। অনুবাদকের কথা তো আরও কম। তবু এ কথা অনস্বীকার্য যে, কবীর চৌধুরীর অনূদিত বই না পেলে বাংলা ভাষা হয়তো অনেকখানিই দরিদ্র থেকে যেত, অন্তত বিশ্বসাহিত্যের দিক থেকে। জিএম কুয়েটজির ওয়য়েটিং ফর দি বারবারিয়ান্স উপন্যাসটির যে চমৎকার অনুবাদ তিনি করেছেন, প্রকাশক আরকটু মনোযোগী হলে বইটি আরও সুন্দর হতে পারত। উল্লেখ্য যে, জিএম কুয়েটজির দি লাইফ এনড টাইমস অব মাইকেল কে উপন্যাসটিও মি. চৌধুরী অবিস্মরণীয় মাইকেল কে নামে অনুবাদ করেছেন। বাংলা ভাষায় এসব বইয়ের প্রচার ও প্রসার বহুগুণে বাড়া উচিত।

 

বর্বরদের জন্য অপেক্ষা ॥ বিদ্যা প্রকাশ

মূল-জিএম কুয়েটজি

অনুবাদ: কবীর চোধুরী

বাংলাবাজার, ঢাকা।

প্রকাশকাল – ফেব্রুয়ারি ২০০৭

প্রচ্ছদ- রাজীব নূর॥ পৃষ্ঠা-১৯৮

দাম-১৬০ টাকা।

ছাপা হয়: দৈনিক জনকণ্ঠে

বিঃ দ্রঃ

সবার প্রতি আহ্বান: আমার লেখাগুলো পড়ুন, মন্তব্য লিখুন এবং Avcbvi Qwemn সেন্ড করুন আমার ইমেইল ঠিকানায়। আমি ফেসবুকে পোস্ট করে দেব Avcbvi ছবিসহ। গাজী সাইফুল ইসলাম, অগত্যা তৃতীয় তলা, কাঁচিঝুলির মোড়, ময়মনসিংহ-২২০০।

 E-mail: gazisaiful@gmail.com

Read Full Post »